১৯৫২ সাল। সে এক উজ্জ্বল উত্তাল সময়। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিল ছাত্র জনতা। সাহসের চেতনায় প্রজ্জ্বলিত হয়ে আত্মপরিচয়ের সন্ধানে ছাত্র ছাত্রী একত্রিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে। সেই সময় একজন তরুণ ছাত্র হাতে ক্যামেরা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, কলাভবন, মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণ, রাজপথে দৃপ্ত পদে হেটে চলেছেন।
তরুণের চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস, চেতনায় গভীর ভালবাসা। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিময় ঘটনাবলীর ঐতিহাসিক আলোকচিত্র তুলে চলেছেন একাগ্রচিত্তে।
সেই অপার বিস্ময় তরুণ আর কেউ নয়। তিনি আমাদের পরম প্রিয় প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, নজরুল ব্যাক্তিত্ব, সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের একনিষ্ঠ অগ্রসেনানী জাতীয় অধ্যাপক ডঃ রফিকুল ইসলাম।
একুশে ফেব্রুয়ারীর আন্দোলন স্পর্শ করেছিল বাঙালির জীবনে, চেতনায়, মনণে, মেধায়। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশের পথ ধরেই বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। রফিকুল ইসলাম রক্তের আখরে রচিত সেই গৌরবজ্জল ইতিহাস ক্যামেরায় ধারন করে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন।
তিনি ধারাবাহিক ভাবে ৫২র ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রাক্কালে এবং প্রস্তুতিপর্বের ঐতিহাসিক জনসভার আলোকচিত্র থেকে শুরু করে ২২শে ফেব্রুয়ারী পুরাতন কলাভবন শীর্ষে কালো পতাকা উত্তোলন, মেডিক্যাল হোস্টেল প্রাঙ্গনে গায়েবানা জানাজা শেষে বিশাল শোকসভা, ১৯৫৩ সালে নির্মিত শহীদ মিনার, ফেস্টুন হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিক্ষোভ মিছিল, পুরাতন ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের শহীদ মিনার নির্মান, ছাত্র জনতার শোক শোভাযাত্রা, শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত, পল্টন ময়দানে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের ফেস্টুন শোভাযাত্রা, ১৯৫৪ সালে আতাউর রহমান খান এবং অলি আহাদের নেতৃত্বে রাজপথে শোভাযাত্রা, ১৯৫৬ সালে বর্তমান শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্থরের আলোকচিত্র সহ একুশের আত্মত্যাগের ধারাবাহিক ছবি সমগ্র জাতির সামনে পরম যত্নে তুলে ধরেছেন। বাঙালি সেই ছবি দেখে জাগ্রত হয়েছে। আত্মপরিচয় ও আত্মনিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় নিজেদেরকে যুক্ত রাখতে পেরেছে।
একুশ বাঙালির অস্তিমজ্জায় দীপ্তিমান হয়ে থাকবে চিরকাল। সেই দীপ্তি অনেক বেশি প্রজ্জ্বলিত হয়ে থাকবে রফিকুল ইসলামের আলোকচিত্রে। জাতি বিশ্বাস করে ২১শের গৌরব বোধে বারংবার উজ্জীবিত হবে নতুন প্রজন্ম এই আলোকচিত্র গুলো দেখে।
‘ছবি কথা বলে’- রফিকুল ইসলাম সেই অবিনাশী শক্তি ধারন করে জাতির কাছে এক অনন্য উচ্চতায় আসন করে নিয়েছেন। রফিকুল ইসলাম আলোর পথের যাত্রি।
-অধ্যাপক কাজী মদিনা